রিপন আল মামুন, (জবি প্রতিনিধি)
শুধুমাত্র পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী উৎসব সাকরাইন। বাংলা বর্ষপঞ্জির পৌষ মাসের শেষ দিন ‘সাকরাইন’ পালন করা হয়। ছোট বড় সবাই মিলে মেতে ওঠে এ উৎসব। সাকরাইনকে কেন্দ্র করে ঘুড়িতে ছেয়ে গেছে পুরান ঢাকার আকাশ। উৎসবকে কেন্দ্র করে ঘুড়ি-নাটাই বিক্রির ধুম পড়েছে।
উৎসবটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের হলেও বহু বছর ধরে পুরান ঢাকায় ধুমধামের সাথে সকলেই পালন করছে সাকরাইন উৎসব। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসবকে ‘পৌষ সংক্রান্তি’ বা ঘুড়ি উৎসবও বলা হয়ে থাকে।
সাকরাইনের প্রধান আকর্ষণ ঘুড়ি খেলা। নাটাইয়ে সুতো পেঁচিয়ে হাতে ঘুড়ি নিয়ে আজ প্রতিটি বাড়ির ছাদ থেকে শত শত ঘুড়ি উড়তে থাকে। শুধু ঘুড়ি ওড়ানোই নয়, ঘুড়ি কাটাকুটি খেলাও শুরু হয়ে যায়। রং-বেরঙের ঘুড়ি এক সঙ্গে উড়ে ঢাকার আকাশকে বর্ণিল করে তুলেছে। ঢাকার অন্য অঞ্চল থেকেও হাজারো মানুষের ভিড় জমেছে ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবটি উপভোগ করতে।
সরোজমিনে দেখা যায়, পুরান ঢাকার শাঁখারিবাজারের বেশিরভাগ দোকানে ঘুড়ি-নাটাই বিক্রির হিড়িক। বিক্রেতারা কাল সকাল থেকে আজ রাত অবধি ব্যস্ত সময় পার করছেন ঘুড়ি, নাটাই ও সুতা বিক্রি করতে। সাকরাইনকে কেন্দ্র করে শাঁখারিবাজার ছাড়াও পুরান ঢাকার অলিগলি ফুটপাতে বসেছে ভ্রাম্যমাণ ঘুড়ি, নাটাই ও সুতার দোকান। সকল বয়সের মানুষের ভিড় জমাচ্ছে এসব ঘুড়ি, নাটাই, সুতা কিনতে।
সাকরাইন উৎসব বর্তমান আর ঘুড়ি ওড়ানোর মাঝে সীমাবদ্ধ নাই৷ বিশাল সাউন্ডবক্স, ডিজে, রংবেরঙের সজ্জায় সজ্জিত হয়েছে। আগের দিন বিকেল থেকে শুরু করে সারাদিন ও রাতের উপভোগের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন সকলে। সন্ধ্যা নামলে খেলা শেষে আতশবাজি, শত শত ফানুসে প্রস্তুতি নিয়ে সাজিয়ে আছেন তরুণেরা।
বর্তমান সাকরাইন উৎসব নিয়ে পুরান ঢাকায় বাসিন্দা সাকিব বলেন, সাকরাইন মানে যে ঘুড়ি ওড়ানো বর্তমান আর এটা নাই সাকরাইন ডিজে সাকরাইনে পরিনত হয়েছে। উচ্চ শব্দে সাউন্ডবক্স ও ডিজে না বাজিয়ে আগের মত উৎসবমুখর থাকলে সাকরাইন আরো উৎসবমুখর হয়ে উঠত। আতসবাজি, পটকা, সাউন্ডবক্সের তীব্র শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে আছে। এমন সাকরাইন অনেকটাই কাম্য নয়।
প্রসঙ্গত, সাকরাইন উৎসব মূলত বাঙালিদের পৌষসংক্রান্তি, ঘুড়ি উৎসব নামেও পরিচিত। সংস্কৃত শব্দ ‘সংক্রান্তি’ ঢাকাইয়া অপভ্রংশে সাকরাইন রূপ নিয়েছে। পৌষ ও মাঘ মাসের সন্ধিক্ষণে, পৌষ মাসের শেষদিন সারা ভারতবর্ষে সংক্রান্তি হিসাবে উদযাপিত হয়। তবে পুরান ঢাকায় পৌষসংক্রান্তি বা সাকরাইন সার্বজনীন ঢাকাইয়া উৎসবের রূপ নিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :