“দুধ গলা দিয়ে কালসাপ পুষেছি” প্রবাদটি নিতান্তই মিথ্যা


স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ১২, ২০২৪, ২:৫৭ অপরাহ্ন /
“দুধ গলা দিয়ে কালসাপ পুষেছি” প্রবাদটি নিতান্তই মিথ্যা

প্রতিবেদন: সৈয়দ সাব্বির আলম প্রিন্স

দুধ চুষে বা চেটে খেতে হবে, কারণ এটা তরল পদার্থ। এখন তাহলে আপনার প্রশ্নটা এভাবে সাজিয়ে নেই, তরল পদার্থ চুষে বা চেটে খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা সাপের শরীরে আছে কি নেই?

সাপের জিহ্বা কাঠির মতো বেলনাকার এবং জিভের সামনের অংশটা দ্বিখণ্ডিত করে চেরা। সুতরাং চেটে খাওয়ার জন্য সাপের জিহ্বা উপযোগী নয়। আপনি নিজেই চিন্তা করেন, আপনার জিহবা সামনের অংশে দুই টুকরো হয়ে গেলে কি কিছু চেটে খেতে পারবেন? তাও আবার গোল জিহ্বা?

এবার আসেন চোষার ক্ষেত্রে। কোনো তরল চুষে খেতে হলে মুখের এবং বুকের ভেতরকার চাপ হটাৎই অনেকটা কমিয়ে ফেলতে হয়। এই চাপ হটাৎ কমে যাওয়ার ফলেই বাইরের তরল বায়ুমন্ডলের চাপে গলার ভেতর চলে আসে। ড্রপারে চাপ দিয়ে যেভাবে শিশি থেকে ঔষধ ভরা হয়, ফাউন্টেন পেনে কালি ভরার মতো উপরে চাপ দিয়ে। মানুষের বেলায় বুক ও পেটের মাঝে মধ্যচ্ছদা নামে যে পর্দা থাকে, সেই মধ্যচ্ছদা পর্দা হটাৎই নীচের দিকে নেমে যেয়ে বুকের ভেতর চাপটাকে অনেকটা কমিয়ে ফেলে। এর ফলে মানুষ স্ট্র দিয়ে চুষেও তরল খেতে পারে (পান করতে পারে)।

কিন্তু সাপের কোনো মধ্যচ্ছদা নাই। তাই সাপের ক্ষেত্রে বুকের ভেতর চাপ হটাৎই কমিয়ে ফেলা সম্ভব না, তাই কোনো তরল চুষে খেতে পারাও সম্ভব না। কিন্তু তাহলে দুধ কলা দিয়ে সাপ পালার প্রবাদ এলো কি করে? এর কারণ আগে গরুর গোয়ালে অনেক খড়ের গাদা থাকতো। ইদুর ব্যাং টিকটিকি জাতীয় প্রাণী খাবার পাওয়ার লোভে এবং খড়ের গাদায় গোবরে গা গরম করার লোভে গোয়ালে ঢুকে পড়তো। এদের আবার শিকার বানাতে সাপ যেতো গোয়াল ঘরে।

মনে করা হয় যে, ইদুর ধরার সময় গরুর পায়ের ক্ষুরের আঘাত থেকে বাচবার জন্য সাপ আগেভাগেই গরুর পেছনের পা দুইটা জড়িয়ে ধরতো। অনেক্ষন জড়িয়ে ধরার পরে গরুর পা অবশ হয়ে গেলে তখনই সাপ পা ছেড়ে শিকার ধরতে যায়। কিন্তু এই পা জড়ানো দৃশ্য দেখে রাখালরা ধারণা করতো সাপ দুধ খেতে পা জড়িয়ে ধরেছে।

এদিকে এই রকম কিছু হলে গরুও পরদিন থেকে দুধ দেয়া বন্ধ করে দিতো। মনে করা হতো যে দুধ সাপের এত প্রিয় যে সব দুধ সাপ খেয়ে ফেলেছে। কিন্তু এইখানেও কাহিনি ভীন্ন। এই ব্যাপারটাকে প্রতিবর্ত বলে। প্রতিবর্ত হলো জীবের (উদ্ভিদ ও প্রাণি) একধরনের ব্যবহার যা তার নিজের অজান্তেই ঘটে যায়। যেমন আপনার চোখে হঠাৎ আলো পড়লো আর আপনি চোখ বন্ধ করে ফেললেন। অথবা ভয় পেয়ে গলা শুকিয়ে ফেললেন এবং হাত ঘামিয়ে ফেললেন। গরুও তেমনই দুধ দেয়া বন্ধ করে দিলো। তাই দুধ না খেয়েও সাপের এই দুধ খাওয়ার দুর্নাম।

অন্যদিকে, দুধ এবং কলায় ল্যাক্টিক এসিড থাকে, যা সাপ ল্যাক্টিক এসিড হজম করতে পারে না।
সুতরাং বলাই যাই দুধ দিয়ে কালসাপ পোষার প্রবাদটি নিতান্তই মিথ্যা।